বাবাই জার্মানীতে যাবার পরে অসংখ্যবার ছোট-বড় অসংখ্য কাছের-দূরের মানুষের কাছে শুনতে হয়েছিল যে, অামি আহলাদি বউ,জামাই ছাড়া নাকি কিছুই বু্ঝিনা!! অত্যন্ত সত্যি কথা…! এই কথা শুনতেও তাই আমার যারপরনাই ভাল লাগে..!!
আজকাল বাবাই কাছে নেই….তার ব্যস্ততার কারণে কথা বলার সুযোগও বেশি ঘটে না..!! আমার দিন কাটছে স্মৃতি হাতড়ে হাতড়ে….! সৌভাগ্যের কথা এই যে…. স্মৃতির প্রাচুর্যে টইটুম্বর আমি…. সেই স্মৃতি শুরু শৈশব থেকে…. আর প্রতিটি মুহুর্ত ই শুধু আনন্দ আর আনন্দ…..আর অসম্ভব ছেলেমানুষীতে ভরপুর….!!! আমি হয়তো কোন ঘটনা বলা শুরু করেছি…. পুরো ক্যাম্পাস একবার চক্কর দেয়া হয়ে গিয়েছে;কিন্তু আমার কাহিনী বর্ননা তখনও শেষ হয়নি…!! সে তখন মুগ্ধ হয়ে শুনতো…অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতো…. আমি আরও আপ্লুত হয়ে যেতাম…যদিও ঘটনা ছিল খুবই সামান্য তা হলো… অবার বিস্ময়ে আমার শৈশবের একমাত্র প্রিয় বন্ধুটি ভাবতো…‘একজন মানুষ এত কথা একবারে কিভাবে বলে!!!’ তারপর ধীরে ধীরে এইটা তার অভ্যাসে পরিণত হয়…. যেখানে আমি কথা কম বলা মানেই ফাঁকা ফাঁকা লাগা…!!
তো…. স্মৃতির কথা বলছিলাম….
প্রিয় বাবাই…..
স্মৃতি হাতড়াতে গিয়ে গতকাল জুয়েলারি বক্স থেকে অনেক দিনের পুরোনো আংটি খুঁজে বের করেছি…. আমার অর্নামেন্টের প্রতি তেমন আগ্রহ কোনকালেই ছিল না..শুধুমাত্র আংটি ছাড়া..!! সেই আংটিগুলো ছিল সব তোমার কিনে দেয়া… তুমি টিউশনি করতে… সেই টিউশনির টাকা দিয়ে যখন আমার জন্য আড়ং থেকে আংটি কিনে দিতে….তারচেয়ে অানন্দের আর কিছুই ছিল না আমার কাছে।….

এইবার তোমাকে বলি আংটি আর তোমার-আমার মাঝের সম্পর্কটা…. আমি অনেকদিন আগেই ঠিক করেছিলাম যে তোমার দেয়া আংটি ছাড়া আমি পরবো না কোনদিনও..। প্রতিবারই সেই আংটি কিনে তুমিই নিজে পরিয়েছ অণামিকায়। প্রতিবারই নতুন করে ভাললাগা তৈরী হয়েছে….!
মানুষ যখন বলে আমি তোমাকে ছাড়া কিছু্ই বুঝি না…এত ঢং করি তোমাকে নিয়ে…. কেন রাগ হয় না জানো….? চাইনিজদের একটা মতবাদকে ছোটবেলা থেকে বিশ্বাস করি……অনেক আগে পড়েছিলাম…. হাতের পাঁচ আঙ্গুল পাঁচ ধরনের সম্পর্ক কে প্রকাশ করে। বৃদ্ধা আঙ্গুল বাবা-মা , তর্জনী ভাই বোন, মধ্যমা নিজেকে , অনামিকা ভালোবাসার মানুষকে আর ছোট আঙ্গুলটি বাচ্চা কে বোঝায়। দুই হাতের তালু মুখোমুখি রেখে দুই হাতের দশটি আঙুল এক করে মধ্যমা দুইটি ভাঁজ করে পিঠাপিঠি লাগালে অন্য চারটি আঙুলই পরস্পরকে স্পর্শ করে থাকে। এই অবস্থাতে সব আঙ্গুলই পরস্পর থেকে সহজেই আলাদা করা যাবে…শুধুমাত্র অনামিকা ছাড়া..অনামিকাকে সহজে আলাদা করা যায় না..গেলেও বেশিক্ষণ আলাদা থাকে না.!! তাহলে তোমাকে ছাড়া আমি কিছু ভাববো কেন…? তোমাকে ছাড়া থাকবো কেন…? তোমাকে নিয়ে ‘ঢং’ করবো না কেন…?
আংটি হলো দৃশ্যমান বন্ধন…… Better half… Half of my soul & half of urs…. এভাবেই ছোট্ট একটা ঘর….. আনন্দ,কষ্ট,রাগ,অভিমান…সবকিছুর ভাগাভাগি….. তুমি একজন কচ্ছপ (একবার কামড়ে ধরলে ছাড়ানো মুশকিল আছে) মানবীর অনামিকায় বছরের পর বছর একটি করে নতুন ডিজাইনের আংটি পরিয়েছ…
কাজেই কচ্ছপ মানবী (হাজার ঝড়-ঝাপটাতেও ছাড়বে না,শক্ত করে ধরে থাকবে)…. আহলাদ করেই যাবে তোমাকে নিয়ে…..এই আহলাদ চিরস্থায়ী হোক…. শতবর্ষী হোক… তখন আমাদের নাতি-নাতনিদের নিয়ে বিরাট এক অনুষ্ঠান করবো…… জীবনের শেষ আংটিটা সেইদিন কিনে পরিয়ে দিবে..

মারা যাবার পরেও চাই ঐ আংটিটা আমার অনামিকাতে যেন থেকে যায়.. আমার শরীরের মাংসগুলো পচে নষ্ট হয়ে যাবে…. কংকাল বেরিয়ে যাবে…. অনেক বছর পরে কোনভাবে হয়তো আংটিটা অন্য কেউ পাবে…..সে কি জানবে সেই আংটিটার মূল্য কত…. সেই আংটিটার ইতিহাস কি….!!!
Leave a Reply