আমাদের দেশে কোন ধর্মীয় দিবস কেউ পালন করুক কিংবা না করুক, একটি উৎসবের আমেজ ঠিকই চলে আসে নানাভাবেই। রাষ্ট্রীয় ছুটি কিংবা দীর্ঘদিনের চিরাচরিত অভ্যাসের মধ্য দিয়েই এই আমেজগুলো চর্চিত হয়ে যাচ্ছে। প্রধান ধর্মীয় দিনগুলোতে যেমন আমরা সবাই সরকারী ছুটি পেতাম, ঠিক তেমনি কিছু ছোটখাট অঘোষিত ছুটির চর্চাও কিন্তু হয়ে থাকে আমাদের দেশে। যেমন, কালকে সবে বরাতের ছুটি, আজকেই অফিসে যেন একটি উৎসবের আমেজ! কি কি হালুয়া বানাতে হবে, ছুটির পরের দিন যেন অফিসের কলিগদের জন্য আনা হয়, এরকম নানা কথায় একটু আগে আগেই অনেক প্রতিষ্ঠানে ছুটি দিয়ে দেয়া হয় অথবা রোজার একমাস পরিবর্তিত সময়ে অফিস চলে। এমন কি পুজোর বা বৌদ্ধ পূর্নিমা কিংবা ক্রিসমাসের আবেশও যেন আমাদের দেশে কিছুই কম নয় সকলের মাঝে! অফিস, বাসা থেকে শুরু করে বাজার পর্যন্ত সর্বত্রই এর বিচরণ।
সবাই বিরক্ত হয়ে ভাবছেন তো যে এসব আমরা জানিই, এ আবার নতুন কি! নতুন তো নয়, তবে আমরা মিস করি। জার্মানিতে মুসলিমরা দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ হবার পরেও আলাদা করে মুসলিম ধর্মীয় দিবস পালনের কোন ব্যবস্থা এখানে নেই। শুধু মুসলিম কেন, শুধুমাত্র খ্রিষ্টীয় ধর্ম সংশ্লিষ্ট যে দিবসগুলো পালিত হয়, তারও আবার রকম ফের আছে। যেমন, ক্রিসমাস জামার্নির সব জায়গাতেই সরকারীভাবে পালিত হয়, সরকারী ছুটিও থাকে সেসময়ে, প্রায় একমাস ব্যাপী এই উৎসবের উদযাপন হয় নানাভাবে। আবার সারা বছর তাদের অনেক ধর্মীয় দিবস আছে যেগুলো কিনা স্টেটভেদে পালিত হয় কিংবা হয় না। এমন একটি দেশে বসে একটু নস্টালজিক হবো এ আর দোষের কি!
ঈদের দিন তো কোন ছুটি নেই। তাই যার পক্ষে সম্ভব সে এই দিনটিতে ছুটি নিয়ে নেন, আর যারপক্ষে সম্ভব হয়না তিনি ঈদের দিনেও অফিসে ছুটে যান পরিবার ছেড়ে! মসজিদ সবার কাছেও হয়না, তাই হয়তো অনেকেই ঈদের নামাজ ইচ্ছা থাকলেও পড়তে পারেন না। কাজেই বুঝতেই পারছেন, দেশে যে অবধারিত একটি আমেজ নিজে নিজেই তৈরী হয়ে যায়, সেটি জার্মানিতে বসে আমরা তৈরী করে নিই নিজেদের সুযোগ-সুবিধা অনুযায়ী। তাই তো ঠিক করলাম এবারেও ঈদের পরে কাছের মানুষগুলোকে নিয়ে ঈদ আনন্দ করবো। এখানে আমাদের আত্মীয়তার মাত্রা বোধকরি ভিন্ন। অনেক অপরিচিত মানুষও পরিচিত আর কাছের হয়ে যান নিজেদের অজান্তেই; বিপদে, আনন্দে সবাই চেষ্টা করেন অন্যের পাশে থাকতে।


সবচেয়ে সুন্দর অভ্যস্ততা হলো, খাওয়ার শেষে সবাই কিচেনে এসে প্লেট ধুয়ে রাখার চেষ্টা এবং বাংলাদেশী অভ্যস্ততায় আমাদের সেটাকে নাকচ করে দেয়ার চেষ্টা। তবে চেষ্টায় কোন ফল হয়নি, আমাকে কৌশলে সরিয়ে সবাই অামার অনেক কষ্টটাকে কমিয়ে দিয়েছিলেন সেদিন। এই ছোটখাট অভ্যস্ততাই কিন্তু সকলকে অনেক বেশি কর্মক্ষম, সক্রিয় করে রাখে, এমনকি ডিভিশন অব লেবারের ধারনাকেও পশ্চাদে লাথি মেরে স্বামী,স্ত্রী,সন্তান কিংবা বন্ধু, সবাইকে পাশাপাশি সুন্দর মানসিকতা নিয়ে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করে!!

অন্যদিন ভাইয়ারাই বাসায় যাওয়ার জন্য তাড়া দিতে থাকে। কিন্তু এবার তো সবাই মিলে বিশ্বকাপ ম্যাচ দেখছেন উত্তেজিত হয়ে!! তাই সবার একসাথে আরও বেশি কিছু সময় কাটানোর সুযোগ করে দিয়েছিল টিভি স্ক্রিনের ফুটবল ম্যাচগুলো। আর এভাবেই হয়তো পরের ঈদে আবারও দেখা হয়ে যাবে হাজারও ব্যস্ততার মাঝে।
Leave a Reply