বয়স হচ্ছে!! বার্ধক্যের রোগও শরীরের সাথে জুড়তে শুরু করে দিয়েছে। মনে হয় এই তো সেদিন আমি স্কুলে পড়তাম। কি অানন্দের ছিল সেসব দিনগুলো। মাঝে মাঝেই চিন্তা করি, জীবনের সবচেয়ে অানন্দের সময় কোনটা ছিল? তখন মনে হয়, অাসলে একেক সময়ের আনন্দের ধরনগুলো একেক রকমের হয়। সেই বোধগুলোও হয় ভিন্ন ভিন্ন। শৈশবে মায়ের ছাঁয়ায় থাকার আনন্দ বা নিজের ভালবাসার মানুষকে নিজের জীবনের সাথে যুক্ত করার আনন্দ অথবা জীবনে প্রথমবার নিজের শরীরের ভেতরে সন্তানের বেড়ে ওঠা বা প্রথম মাতৃত্বের স্পর্শ , কোনটাই কোনটার চেয়ে কম আনন্দের নয় কিন্তু!!
আমার মনে আছে, আম্মু আমার সাথে শুয়ে জড়িয়ে না ধরা পর্যন্ত আমার ঘুম অাসতো না। মোটামোটি জোর করেই আমাকে আলাদা বিছানায় দেয়া হয়েছিল, তাও যখন আমি ক্লাস নাইনে পড়ি!! আম্মুর ওপর সে কি অভিমানই না হয়েছিল সে সময়!! আস্তে আস্তে একা থাকার অভ্যাস হলো। নিজের ঘরে নিজের মতো করে। তারপর বাবাই এলো। সে পাশে না শুলেও ঘুমাতে ইচ্ছা করে না! সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, রাতেও কাজ করতো। শুতে যেতে দেরি হতো। আমিও ওর পাশে সোফায় হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়তাম! রাত ৩/৪ টার দিকে সে কাজ করে উঠলে, আমাকে ডেকে হাত ধরে নিয়ে বিছানায় ঘুমাতে পাঠাতো!! আমি ঘুমের ভেতরেই সোফা থেকে বিছানায় গিয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়তাম! সকালে অফিস থাকতো যে!!! আর আমাদের ছেলে হলো, ছেলেকে না জড়িয়ে আমি এখন ঘুমাতেই পারিনা!! ছেলে হবার পরে ২ বছর ঠিক মতো ঘুমাতেই পারিনি আমি। ছেলে ঘুমাতো না, তাই আমিও না। সারারাত ছেলে নিয়ে ঘুম আর জেগে ওঠার খেলা শেষ করে অফিসে দৌঁড়াতাম অঘুম ক্লান্তি নিয়ে। আর বাসায় ফিরে দরজা থেকেই ছেলে আমার কোলে। তখর সে তার নানকেও চিনতে চাইতো না!! ঘরে সে শুধ ু তার মায়ের সাথে থাকতে চাইতো। এভাবেই চলতো আমাদের মা-ছেলের সময়।
এইদেশে তো জন্মানোর সাথে সাথেই আলাদা রুমে ঘুমাতে হয় বাচ্চাদের। অনেকেই অবাক হয় এখানে যে, ছেলে আমার সাথে ঘুমায় এটা শুনে।আর আমি ভাবি ছেলেকে জড়িয়ে না ধরে আবার ঘুমানো যায় নাকি!! আজকাল প্রায় মৃত্যুকে নিয়ে চিন্তা করি। ভয়ও পাই। একা কিভাবে থাকবো অন্ধকারে?? সত্যিই কি আত্মা বলে কিছু রয়েছে? মৃত্যুের পর সে কি সময়হীন অন্ধকারে আটকে পড়ে থাকবে?? এসবই হলো বয়সের চিন্তা!!! তবে কি সত্যিই বয়স হচ্ছে?!
Leave a Reply