আমার পুত্রের মতো আমিও অপেক্ষায় থাকি কখন ঈদ উপলক্ষ্যে পাঠানো তার নানের, মানে আম্মুর পার্সেলটা আসবে। পুত্র আর আমার পার্থক্য হচ্ছে, উনি একটু পরপর আমাকে জিজ্ঞেস করে অস্থির করতে পারে যে, কখন নান এর গিফট প্যাকেট আসবে, আমি কাউকে অস্থির করতে পারিনা!! নিজেই একটু পরপর ডেলিভারি স্ট্যাটাস চেক করি যে,কতদূর পৌঁছালো। মনে করেন, ৫ মিনিট আগেই করেছি, তারপরেও আবার ৫ মিনিট পরে চেক করি, সোজা কথায় আমি ছোঁচা।
তো ঘটনা হলো, এইরকম ভালবাসা ভর্তি বাক্স কিছুদিন পরপরই আসে সাথে আব্বুর লেখা চিরকুট!! এরকম চিরকুট আমি ছোটবেলা থেকে বহুবার পেয়েছি আব্বুর কাছ থেকে। ধরেন, আমার বিজ্ঞানের নোট আব্বু করে দিয়েছে তার ভেতরে চিরকুটে লেখা থাকবে, ‘তন্বী, লেখাপড়া করিবার সময় চলিয়া যাইতেছে। সময় নষ্ট করিও না, যে সময় চলিয়া যায় তাহা আর ফিরিয়া আসে না।’ তারপর মনে করেন, স্ক্র্যাব বুক বানাবো, আব্বুকে বললাম কিছু লিখতে, সেখানেও চিরকুট, ‘এই সকল বাদ দিয়া পড়ায় মনোনিবেশ করিলে ভাল ফলাফল হইবে।’
সারাদিন পড়া, পড়া আর পড়া!! আমি আর পড়াশুনা, দুইটা কি যায় বলেন? আমার মন পরে থাকে গল্পের বইয়ের পাতায়, গান বা নাচের রিহার্সেলে….. তখনও চিরকুট, ‘গান-নাচে সময় ব্যয় না করিয়া পড়ায় মন দাও। আর গান শিখিবার ইচ্ছা হইলে সন্ধ্যা মুখার্জির ক্যাসেট হইতে ২০টি গান কন্ঠে তুলিয়া রাখিও। ইহার জন্য পড়া নষ্ট করিও না।’
তো আমার পুত্র হবার আগ পর্যন্ত পড়া নিয়ে প্রতিদিনই উপদেশ শুনতে হতো। কেন আরও ডিগ্রিধারী হবার চেষ্টা করছি না, ইত্যাদি। তো পুত্র হবার পরই আব্বু পাল্টি খেলো!! আমাকে আর চিনতে পারছে না তখন থেকে, কথা শুরু থেকে শেষ সবই নাতির সাথে প্রাসঙ্গিক!! আর দেশ থেকে প্রথমবার এসে ব্যাগ খুলেও একটি চিরকুট পেলাম, লেখা
‘ইভানকে বকিবে না, মারিবে না,সবসময় আদর করিবে,যাহা আবদার করে তাহা দিবে’ ইত্যাদি। সেই থেকে এখন পর্যন্ত আমি প্রতিটি পার্সেলের সাথে এই ভালবাসাময় চিরকুট পাই। পেয়ে বিরক্ত গলায়, কখনও ঠাট্টা করে বলি, কি এক কথা বারবার লিখ?’ মনে মনে কিন্তু খুশি হই….খুব ভাল লাগে…মনে হয় এই চিরকুটটা না পেলে বোধহয় এই বক্সটায় যাই আসুক, পরিপূর্ণ হতো না…….
Leave a Reply